ব্রেন স্ট্রোক: কারণ, লক্ষণ চিকিৎসা ও (brain stroke প্রতিরোধের উপায়2025)
ব্রেন স্ট্রোক: কারণ, লক্ষণ, (চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়)
স্ট্রোক কীভাবে হয়?
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ পরিচালনার জন্য নিরবিচারে রক্তপ্রবাহ অপরিহার্য। এই রক্তের মাধ্যমেই অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। কিন্তু রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে বা হঠাৎ ফেটে গেলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই অংশের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানুষের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে।
স্ট্রোকের ধরণ
- ইস্কেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে এটি হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ, মোট স্ট্রোকের প্রায় ৮৭% ইস্কেমিক হয়। এর দুটি উপধারা রয়েছে:
- থ্রোমবোটিক: রক্ত জমে মস্তিষ্কের ভেতরে ব্লক তৈরি হয়।
- এম্বোলিক: শরীরের অন্য কোথাও তৈরি হওয়া রক্ত জমাট মস্তিষ্কে এসে আটকে যায়।
- হেমোরেজিক স্ট্রোক: উচ্চ রক্তচাপ বা আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক পরিণতি ঘটতে পারে।
- ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA): একে “মিনি স্ট্রোক” বলা হয়। এতে রক্ত চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়, তবে কোষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু এটি ভবিষ্যতের বড় স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
স্ট্রোক হওয়ার কারণগুলো কী?
- উচ্চ রক্তচাপ: স্ট্রোকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি রক্তনালীর দেয়াল দুর্বল করে দেয়।
- ডায়াবেটিস: রক্তনালীতে ক্ষতি সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্লকেজ হতে পারে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: রক্তনালী সংকুচিত হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়।
- উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তনালীর মধ্যে চর্বি জমে ব্লক তৈরি হয়।
- অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন: অতিরিক্ত লবণ, চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব: হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ কীভাবে বুঝবেন?
স্ট্রোক সাধারণত হঠাৎ ঘটে, তবে কিছু লক্ষণ আগেই দেখা দিতে পারে:
- মুখের এক পাশে অবশভাব বা বেঁকে যাওয়া
- এক পা বা এক হাত অবশ হওয়া
- কথা জড়ানো বা বলার সমস্যা
- হঠাৎ ঝাপসা দেখা বা চোখে অন্ধকার দেখা
- চেতনা হারানো বা হঠাৎ ভারসাম্য হারানো
- প্রচণ্ড মাথাব্যথা
FAST টেস্ট:
স্ট্রোক শনাক্তে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয় FAST পদ্ধতি:
- F (Face): মুখ এক পাশে ঝুলে পড়েছে কি?
- A (Arms): দুই হাত একসাথে তুলতে পারছে না?
- S (Speech): কথা অস্পষ্ট বা জড়িয়ে যাচ্ছে?
- T (Time): দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্ট্রোক হলে প্রাথমিক করণীয়
স্ট্রোকের পরে প্রথম ৩ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। করণীয়গুলো হল:
- রোগীকে যতো তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান, বিশেষ করে নিউরোলজিস্ট বিভাগে।
- কোনো খাবার বা পানি দেবেন না, রোগী গিলে ফেলতে না পারলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
- রোগী অজ্ঞান হলে মুখ নিচে করে শোয়ান, যাতে শ্বাসনালী মুক্ত থাকে।
- প্রয়োজনে CPR দিন এবং অ্যাম্বুলেন্স কল করুন।
চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ
ইস্কেমিক স্ট্রোক:
- TPA ইনজেকশন: এটি ব্লক খুলতে সহায়তা করে, তবে ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়।
- Ecosprin: রক্ত পাতলা রাখতে সহায়ক।
- Atorvastatin: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক:
- অত্যধিক রক্তপাত হলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ প্রয়োজন হয়।
মুখের ঘা বা খাবারে অসুবিধা:
- Meoral Oral Solution: মুখের ঘা নিরাময়ে কার্যকর।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা:
- CT Scan / MRI Brain
- ECG এবং Echo
- Blood Sugar, Cholesterol প্রোফাইল
ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন
স্ট্রোকের পর সঠিক পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি। চলাফেরা, কথা বলা এবং স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে:
- নিয়মিত ফিজিওথেরাপি
- স্পিচ থেরাপি
- মেমোরি ট্রেনিং ও মস্তিষ্ক চর্চা
স্ট্রোক রোগীর জন্য খাবার পরামর্শ
যদি রোগী খেতে না পারে, তাহলে তরল ও সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে:
- মুরগির বা সবজির স্যুপ
- চিনি ছাড়া ফলের রস
- ওটস, নরম খিচুড়ি
- ORS ও পর্যাপ্ত পানি
স্ট্রোক প্রতিরোধে কী করবেন?
- রক্তচাপ ও সুগার নিয়মিত পরীক্ষা করুন
- ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন
- ফাইবারযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখূন
ব্রেন স্ট্রোক কিভাবে হয়?
উপসংহার
ব্রেন স্ট্রোক জীবনের গতি থামিয়ে দিতে পারে, তবে সঠিক জ্ঞান, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। তাই নিজে সচেতন হোন এবং অন্যদেরও সতর্ক করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url