পাসপোর্ট করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে ২০২৫? (সম্পূর্ণ গাইডলাইন)
তো চলুন, দেরি না করে ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক পাসপোর্ট করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে, ই-পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম, পাসপোর্ট ফি এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পোস্ট সূচিপত্র:
ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য সাধারণ কাগজপত্র
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর জন্য কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয় না। তবে বয়স ও পেশাভেদে কিছু ডকুমেন্টের মূল কপি এবং ফটোকপি আবেদনের সময় সঙ্গে রাখতে হয়।
সকলের জন্য আবশ্যিক কাগজপত্র:
- আবেদনপত্রের সারাংশের প্রিন্ট কপি (Application Summary): অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর যে সারাংশ বা সামারি পেজটি আসবে, সেটির প্রিন্ট কপি।
- অনলাইন পেমেন্টের প্রিন্ট কপি (Payment Slip): আবেদনের সময় অনলাইনে বা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC):
- ২০ বছরের বেশি বয়স হলে: জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অবশ্যই লাগবে।
- ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স হলে: জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC) যেকোনো একটি হলেই চলবে।
- ১৮ বছরের কম বয়স হলে: অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC) অবশ্যই প্রয়োজন হবে।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে): যদি আপনার আগে কোনো পাসপোর্ট (MRP বা পুরোনো) থেকে থাকে, তবে সেই পাসপোর্টের ফটোকপি ও মূল কপি সঙ্গে রাখতে হবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কাগজপত্র
কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ কাগজপত্রের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
- শিশুদের জন্য (১৫ বছরের নিচে): শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC), পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি এবং ৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য 3R সাইজের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি প্রয়োজন হবে।
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য: সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তিপত্র (NOC) বা সরকারি আদেশ (GO)।
- পেশাগত প্রমাণের জন্য: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে নিজ নিজ পেশার সনদপত্রের ফটোকপি।
- বিবাহিতদের জন্য: বৈবাহিক অবস্থা প্রমাণের জন্য নিকাহনামা বা বিবাহ সনদের ফটোকপি।
অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
ঘরে বসেই কয়েকটি সহজ ধাপে আপনি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: প্রথমে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
- আবেদন ফরম পূরণ: ব্যক্তিগত সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। একটি ভুল আপনার পাসপোর্ট পেতে দেরি করিয়ে দিতে পারে।
- ফি পরিশোধ: পাসপোর্টের মেয়াদ ও পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারিত ফি অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিন।
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ: টাকা জমা দেওয়ার পর ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য আপনার সুবিধামতো একটি তারিখ নির্বাচন করুন।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান: নির্ধারিত তারিখে কাগজপত্রসহ নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করান।
- পাসপোর্ট সংগ্রহ: আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে মোবাইলে SMS আসবে। এরপর ডেলিভারি স্লিপ দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে মেয়াদ, পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং ডেলিভারির ধরনের উপর। (বিঃদ্রঃ এই ফি পরিবর্তনশীল, আবেদনের পূর্বে ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ ফি জেনে নিন।)
- ৪৮ পৃষ্ঠা ও ৫ বছর মেয়াদ: সাধারণ ডেলিভারি - ৪০২৫ টাকা, জরুরি ডেলিভারি - ৬৩২৫ টাকা।
- ৪৮ পৃষ্ঠা ও ১০ বছর মেয়াদ: সাধারণ ডেলিভারি - ৫৭৫০ টাকা, জরুরি ডেলিভারি - ৮০৫০ টাকা।
- ৬৪ পৃষ্ঠা ও ৫ বছর মেয়াদ: সাধারণ ডেলিভারি - ৬৩২৫ টাকা, জরুরি ডেলিভারি - ৮৬২৫ টাকা।
- ৬৪ পৃষ্ঠা ও ১০ বছর মেয়াদ: সাধারণ ডেলিভারি - ৮০৫০ টাকা, জরুরি ডেলিভারি - ১০৩৫০ টাকা।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: পাসপোর্ট করতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত, সাধারণ ডেলিভারির ক্ষেত্রে ১৫-২১ দিন এবং জরুরি ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৭-১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কি ছবি নিয়ে যেতে হয়?
উত্তর: না, ৬ বছরের বেশি বয়সী কারও ছবি নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পাসপোর্ট অফিসেই ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়।
প্রশ্ন: পুলিশ ভেরিফিকেশন কখন হয়?
উত্তর: আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের NOC থাকলে ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না।
প্রশ্ন: পাসপোর্টের তথ্য ভুল হলে কী করণীয়?
উত্তর: পাসপোর্টে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রসহ রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে।
শেষ কথা
পাসপোর্ট করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে, পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম, পাসপোর্ট ফি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে লেখা এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি আশা করি আপনার ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই রকম আরও দরকারি ও তথ্যপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে। ততক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url