প্রকৃতির ১০টি শক্তিশালী ঔষধ: সুস্থ থাকুন ফার্মেসির ঔষধ ছাড়াই
প্রকৃতির শক্তিশালী ১০টি ঔষধ যা কোনো ফার্মেসিতে পাবেন না
আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমরা দারুণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব—প্রকৃতির এমন ১০টি শক্তিশালী ওষুধ যা আপনি কোনো ফার্মেসিতে পাবেন না।
সুস্থতা প্রতিটি প্রাণীর একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য, এবং এর জন্য কোনো প্রাণীকে সচেতনভাবে কোনো প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হয় না। প্রতিটি প্রাণীর জীবনাচার এবং খাদ্যাভ্যাস প্রকৃতি দ্বারা নির্ধারিত। আমরা যদি দেখি, প্রতিটি প্রাণী তার খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই স্থির, এবং এর জন্য তাকে কোথাও পড়াশোনা করতে হয় না বা জানার চেষ্টা করতে হয় না।
ব্যতিক্রম হচ্ছে মানুষ, কারণ মানুষকে দেওয়া হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। সবকিছু করার সুযোগ এবং স্বাধীনতা মানুষের রয়েছে। একারণে মানুষ এমনি এমনি সুস্থ থাকতে পারে না; সুস্থতা তাকে অর্জন করতে হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিতে আমাদের সুস্থ থাকার জন্য সবকিছুই দিয়ে রেখেছেন।
তো দেরি না করে চলুন, প্রকৃতির সেই দশটি শক্তিশালী ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সুস্থ থাকার ১০টি প্রাকৃতিক উপায়:
- জীবন্ত খাবার
- পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম
- প্রাণায়াম বা দমচর্চা
- ফাস্টিং বা উপবাস
- মেডিটেশন বা ধ্যান
- সানবাথ বা সূর্যস্নান
- খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা
- পর্যাপ্ত পানি পান
- পর্যাপ্ত গভীর ঘুম
- শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা
আরো পড়ুন
হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ: বয়স ৪০ পেরোলেই আপনার যা যা করণীয়
কালোজিরা: এক প্রাকৃতিক মহৌষধ – স্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের গুপ্ত রহস্য।
১. জীবন্ত খাবার
- জীবন্ত খাবার: যে খাবার প্রকৃতিতে যে অবস্থায় উৎপন্ন হয়, সেই খাবার সংগ্রহ করে ভালো করে ধুয়ে-মুছে জীবাণুমুক্ত করে সরাসরি খেয়ে নিতে পারলে, সেটিই জীবন্ত খাবার।
- অর্ধমৃত খাবার: যখন কোনো খাবারকে হালকা তাপে অল্প রান্না করা হয়, সেটি অর্ধমৃত খাবার।
- মৃত খাবার: যখন কোনো খাবারকে প্রচুর তাপে বহুক্ষণ ধরে রান্না করা হয়, তখন তা মৃত খাবারে পরিণত হয়।
প্রকৃতিতে মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী জীবন্ত খাবার খেয়েই জীবন ধারণ করে। এমন কোনো প্রাণী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে তার মায়ের রান্না করার জন্য অপেক্ষা করে। সবাই প্রকৃতি থেকে সরাসরি খাবার খায়। তাই লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা বলেন, সুস্থতার জন্য একজন মানুষের প্রতিদিনের খাবারের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ জীবন্ত খাবার হওয়া উচিত।
কীভাবে খাবেন?
- প্রতিদিন তিন থেকে চার ধরনের তাজা ফল।
- তিন থেকে চার ধরনের সালাদ।
- তিন থেকে চার ধরনের সবুজ পাতার জুস।
- সব ধরনের বাদাম, বীজ, বিন এবং অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, মসুর ও মাসকলাই ডাল।
কী থাকে জীবন্ত খাবারে?
লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা বলেন, শুধুমাত্র জীবন্ত উদ্ভিজ্জ খাবারে পাঁচটি জিনিস থাকে যা কোনো প্রাণীজ বা মৃত খাবারে থাকে না। এই পাঁচটি উপাদান হলো:
- ফাইবার বা আঁশ
- এনজাইম
- ফাইটোকেমিক্যাল
- বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি
- লাইফ ফোর্স বা প্রাণশক্তি
তাই যদি সুস্থ থাকতে চান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০% জীবন্ত খাবার গ্রহণ করুন। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে বেশিরভাগ অর্ধমৃত এবং খুব অল্প পরিমাণে মৃত খাবার খেতে পারেন। আর শাকসবজি রান্না করার সময় অবশ্যই অল্প তাপে রান্না করবেন।
২. পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম
"নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।"
অর্থাৎ, কষ্ট এবং পরিশ্রম মানুষের জীবনেরই অংশ। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, ডেস্ক-নির্ভর পেশা এবং প্রযুক্তির কারণে আমাদের শারীরিক পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। তাই এর বিকল্প হিসেবে প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত।
কীভাবে করবেন?
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, এর সাথে ১০ মিনিট জগিং এবং ২০ মিনিট ইয়োগা অথবা সাঁতার। এভাবে ব্যায়াম করলে আপনি এর সকল উপকারিতা পাবেন এবং সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকবেন।
৩. প্রাণায়াম বা দমচর্চা
এ কারণেই লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা নিয়মিত দমচর্চাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেন। প্রাচীন যোগ সাধনায় সাধকরা প্রায় ৪০০ ধরনের প্রাণায়াম করতেন। আমরা যারা সুস্থ থাকতে চাই, তাদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দুই ধরনের দম চর্চা করা উচিত। এতে ধীরে ধীরে আপনার এনার্জি লেভেল বাড়বে এবং আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লান্তিহীন কাজ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন
দ্রুত ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায় (স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও টিপস)
তুলসীর ১০১ উপকারিতা: স্বাস্থ্য, ত্বক ও মন সুস্থ রাখার জাদুকরি ভেষজ!
৪. ফাস্টিং বা উপবাস
তাই সুযোগ পেলে সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একদিন হলেও ফাস্টিং করুন। আপনি রোজা রাখতে পারেন, উপবাস করতে পারেন বা ওয়াটার ফাস্টিং করতে পারেন। নিয়মিত ফাস্টিং করলে আপনার সুস্থতা বাড়বে এবং আপনি একজন সুস্থ, প্রাণবন্ত ও দীর্ঘজীবী মানুষে পরিণত হবেন।
৫. মেডিটেশন বা ধ্যান
জন্মের পর থেকে আমাদের মনের ভেতর নানান দূষণ, ক্ষোভ, ঈর্ষা, ঘৃণা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জমা হতে থাকে। মেডিটেশন এই মানসিক জঞ্জাল পরিষ্কার করে। অন্যদিকে, এটি ব্রেন ফ্রিকোয়েন্সিকে আলফায় নামিয়ে এনে আপনার মস্তিষ্ককে ঠান্ডা করে। পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য প্রশান্ত মন এবং ঠান্ডা মস্তিষ্ক অতীব জরুরি। শুধু তাই নয়, নিয়মিত মেডিটেশন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে।
৬. সানবাথ বা সূর্যস্নান
আধুনিক মানুষ ব্যস্ততা বা কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোদে যেতে চায় না। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-ডি তৈরি হচ্ছে না। এর অভাব হলে আপনি কখনো পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারবেন না। সারা বিশ্বে ভিটামিন-ডি-এর স্বল্পতা মহামারী আকার ধারণ করেছে। ২০২২ সালে NIH-এর একটি রিপোর্ট ("Prevalence of Vitamin D in Bangladesh") অনুযায়ী, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এই সমস্যায় ভুগছে।
ভিটামিন-ডি-এর অভাব হলে কী হবে?
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
- শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন বাড়বে।
- ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হবে।
- রক্তচাপ বাড়বে এবং হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।
তাই সুস্থ থাকতে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন সকালের নরম রোদে সানবাথ করুন বা সূর্যস্নান করুন।
৭. খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মাঝে মাঝে খালি পায়ে মাটির উপর বা ঘাসের উপর হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত উপকারী। আমাদের জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় মুঠোফোন এবং টিভির মতো যন্ত্র ব্যবহারের ফলে শরীরে পজিটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শরীরে প্রদাহ ও ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।
আপনি যখন খালি পায়ে মাটিতে হাঁটেন, তখন দেহ মাটি থেকে নেগেটিভ চার্জ শোষণ করে দেহের অতিরিক্ত পজিটিভ চার্জকে নিউট্রালাইজ করে ফেলে। ফলে শরীরের প্রদাহ কমে, ঘুমের সমস্যা দূর হয় এবং সামগ্রিকভাবে সুস্থতা বাড়ে। এছাড়াও এটি মানসিক চাপ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৮. পর্যাপ্ত পানি পান
"আর আমি পানি থেকে সকল প্রাণের উন্মেষ ঘটালাম।"
বিজ্ঞান অনুযায়ী, একজন পুরুষের শরীরের ৬০% এবং একজন নারীর শরীরের ৫৫% পানি। আমাদের রক্তের ৯১% পানি। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন। দিনটি শুরু করুন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক লিটার হালকা কুসুম গরম পানি পান করার মাধ্যমে।
৯. পর্যাপ্ত গভীর ঘুম
ঘুমের একটি আধ্যাত্মিক দিকও রয়েছে। সূরা জুমারের ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ঘুম এবং মৃত্যু—উভয় ক্ষেত্রেই রুহু বা আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
না ঘুমালে কী অসুবিধা হবে?
- মানসিক সমস্যা: মেন্টাল হাউস ক্লিনিং না হওয়ায় আপনি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হতে শুরু করবেন।
- শারীরিক সমস্যা: রক্তে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমে শরীরে অবসন্নতা, পেশিতে খিঁচুনি, বমি বমি ভাব এবং দুর্বলতা তৈরি হয়। দিনের পর দিন না ঘুমালে অর্গান ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে।
পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য দয়া করে গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।
১০. শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা (Gratitude)
এই কৃতজ্ঞতা হতে হবে মানুষের প্রতি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি। যার কাছ থেকে আপনি সামান্যতম উপকৃত হয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এবং তাকে ধন্যবাদ জানান। সব সময়, সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিন।
প্রতিদিন ঘুম ভাঙতেই বলুন "শোকর আলহামদুলিল্লাহ", "থ্যাঙ্কস গড" বা নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী প্রভুকে ধন্যবাদ দিন। বলুন, "আরও একটা দিন তুমি দিয়েছো জীবনকে উপভোগ করার জন্য, আরও বেশি সৎকর্ম করার জন্য।" এই কৃতজ্ঞতার অনুভূতি আপনার জীবন বদলে দেবে এবং আপনি সুস্থ, কর্মময় এক দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হবেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রতিদিন ৭০% জীবন্ত খাবার খাওয়া কি সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, সম্ভব। সকালের নাস্তায় ফল ও বাদাম, এবং দুপুর ও রাতের খাবারের আগে এক প্লেট সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করলেই এটি ৭০% এর কাছাকাছি চলে আসে।
ভিটামিন-ডি এর জন্য প্রতিদিন কতক্ষণ রোদে থাকা উচিত?
উত্তর: সাধারণত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট শরীরের কিছু অংশে (যেমন হাত ও পা) রোদ লাগানোই যথেষ্ট।
শহরের ফ্ল্যাটে থেকে খালি পায়ে মাটিতে হাঁটার উপায় কী?
উত্তর: কাছাকাছি পার্ক বা মাঠে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন গিয়ে খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটতে পারেন।
রাতে ভালো ঘুম হয় না, কী করতে পারি?
উত্তর: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল বা টিভি দেখা বন্ধ করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান। হালকা মেডিটেশন বা বই পড়া ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
আপনার সুস্থ জীবনের পথে যাত্রা শুরু করুন আজই!
এই দশটি প্রাকৃতিক নিয়ম আপনার জীবনকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সবগুলো নিয়ম একদিনে শুরু করার প্রয়োজন নেই। আজই যেকোনো একটি বা দুটি নিয়ম বেছে নিন এবং আপনার জীবনে প্রয়োগ করা শুরু করুন। আপনার সামান্য একটি পদক্ষেপই সুস্থতার পথে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার অভিজ্ঞতা বা কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url