রিয়েলমি সি ৭৫ বিস্তারিত রিভিউ: দামের সেরা ডিউরেবল ফোন?

রিয়েলমি সি ৭৫ ফোনের দাম ও ফিচার নিয়ে বাংলা রিভিউ


রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি সাজানো হয়েছে এমন সব গভীর তথ্য ও চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে, যা আপনাকে শুধু একটি ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিতেই সাহায্য করবে না, বরং স্মার্টফোনের বাজার সম্পর্কে আপনার ধারণাকেই নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এই বিষয়ে সবদিক থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ ধারণা পেতে আজকের এই দীর্ঘ আলোচনায় থাকছে বাস্তব ব্যবহারের অভিজ্ঞতা, যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ, বাজারের অন্যান্য ফোনের সাথে তুলনামূলক আলোচনা এবং আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা পরামর্শ।

আমরা আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি রিয়েলমি সি ৭৫-এর ডিজাইন, বিল্ড কোয়ালিটি, অবিশ্বাস্য ডিউরেবিলিটি টেস্ট, ডিসপ্লের খুঁটিনাটি, ক্যামেরার আসল পারফরম্যান্স এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের প্রতিটি দিক নিয়ে চমকপ্রদ সব তথ্য, যা মূল বিষয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু তাই নয়, আমরা এর সাশ্রয়ী সংস্করণ Realme C75x নিয়েও আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার বাজেট অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। তাই আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, কারণ এখানেই আপনি রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এমন সব নির্ভুল ও গভীরতাপূর্ণ বিশ্লেষণ পাবেন, যা হয়তো ইন্টারনেটের আর কোথাও এত সহজ এবং বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।


রিয়েলমি সি ৭৫ সংক্ষিপ্ত বিবরণ (Quick Overview)

  • মডেল: Realme C75
  • প্রসেসর: MediaTek Helio G99 (6nm)
  • RAM/Storage: 8GB LPDDR4X RAM + 128GB / 256GB UFS 2.2
  • ডিসপ্লে: 6.72" IPS LCD, FHD+ (1080 x 2400), 90Hz, 690 nits (Peak)
  • রিয়ার ক্যামেরা: 50MP (প্রধান) f/1.8 + 2MP (সাপোর্ট সেন্সর)
  • ফ্রন্ট ক্যামেরা: 8MP f/2.0
  • ব্যাটারি: 6000mAh
  • চার্জিং: 45W SuperVOOC ফাস্ট চার্জিং (বক্সেই চার্জার)
  • ডিউরেবিলিটি: IP68/IP69 ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স
  • দাম (বাংলাদেশ): ৳19,999 (8/128GB), ৳22,999 (8/256GB)

রিয়েলমি সি ৭৫ ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি: হাতে নিলে কেমন লাগে?

প্রথমেই আসি ডিজাইন প্রসঙ্গে, কারণ একটা ফোন হাতে নেওয়ার পর প্রথম যে অনুভূতিটা হয়, সেটাই এর প্রতি আমাদের প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে দেয়। Realme C75-এর ডিজাইনকে এক কথায় বলা যায় 'পরিচিত কিন্তু আকর্ষণীয়'। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড অনুসরণ করে এতে একটি ফ্ল্যাট-এজ বা সমতল প্রান্তের ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, যা ফোনটিকে একটি আধুনিক এবং প্রিমিয়াম লুক দেয় এবং ধরতেও বেশ আরামদায়ক।

আমাদের হাতে যে গোল্ডেন কালার ভ্যারিয়েন্টটি ছিল, সেটির রিয়ার প্যানেল এক ঝলকে দেখলে মনে হবে এটি হয়তো দামী কোনো গ্লাস দিয়ে তৈরি। কিন্তু আদতে এটি একটি ফ্রস্টেড বা ম্যাট ফিনিশের প্লাস্টিক প্যানেল। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে সহজে আঙুলের ছাপ বা দাগ বসে না। ফলে কভার ছাড়াও ফোনটাকে সবসময় পরিষ্কার এবং নতুন দেখায়। যদিও এটি প্লাস্টিক, কিন্তু বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট মজবুত এবং নিরেট মনে হয়েছে; কোনো ফাঁপা অনুভূতি পাওয়া যায়নি। বডি ফ্রেমটাও প্লাস্টিকের, যা ফোনটিকে হালকা রাখতে সাহায্য করেছে। এর ওজন প্রায় ১৯৬ গ্রাম, যা ৬০০০ mAh এর বিশাল ব্যাটারির বিবেচনায় বেশ ভালোভাবেই ম্যানেজ করা হয়েছে। ওজনটা ফোনের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হওয়ায় হাতে নিতে খুব একটা ভারী মনে হয় না।

ক্যামেরা মডিউলটা বেশ ইন্টারেস্টিং এবং চোখে পড়ার মতো। দেখতে মনে হবে তিনটা বড় বড় ক্যামেরা সেন্সর রয়েছে, যা ফোনটাকে একটা ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মতো লুক দেয়। কিন্তু বাস্তবে এখানে একটি ৫০ মেগাপিক্সেলের মেইন ক্যামেরা এবং একটি সেকেন্ডারি সাপোর্ট সেন্সর আছে। তৃতীয়টি মূলত একটি ডামি রিং বা ডিজাইনের অংশ, যা ক্যামেরা মডিউলের সিমেট্রি বা সামঞ্জস্য ধরে রাখার জন্য দেওয়া হয়েছে। এই ডিজাইন কৌশলটি এখন অনেক ব্র্যান্ডই ব্যবহার করছে।

ডানদিকে রয়েছে পাওয়ার বাটন, যার মধ্যেই সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি বসানো আছে। আমাদের ব্যবহারে এটিকে অত্যন্ত দ্রুত এবং নির্ভুল মনে হয়েছে। প্রতিবারই এক ট্যাপে ফোন আনলক হচ্ছিল, কোনোপ্রকার দেরি ছাড়াই। পাওয়ার বাটনের ঠিক উপরেই আছে ভলিউম রকার। সব মিলিয়ে, বাটনগুলোর পজিশনিং একদম পারফেক্ট এবং এক হাতে ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা হয় না। ফোনের নিচের দিকে রয়েছে USB Type-C পোর্ট, স্পিকার গ্রিল এবং সবার প্রিয় ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক, যা আজকাল অনেক ফোন থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে।


IP রেটিং ও ডিউরেবিলিটি টেস্ট: এটা কি আসলেই indestructible?

রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অনন্য অংশ হলো এর ডিউরেবিলিটি। এই ফোনটিতে রয়েছে IP68/IP69 রেটিং, যা এই প্রাইস সেগমেন্টে এক কথায় অবিশ্বাস্য এবং প্রায় unheard of।

চলুন একটু ভেঙে বলি, IP68 রেটিং মানে হলো এটি দেড় মিটার পরিষ্কার পানির নিচে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকতে পারে। কিন্তু IP69 রেটিং একে নিয়ে গেছে অন্য এক লেভেলে। এর মানে হলো, ফোনটি শুধু পানিতে ডোবা নয়, বরং উচ্চচাপ এবং উচ্চ তাপমাত্রার (৮০° সেলসিয়াস পর্যন্ত) ওয়াটার জেট থেকেও সুরক্ষিত! সহজ কথায়, আপনি যদি গরম পানি দিয়েও ফোনটি পরিষ্কার করতে চান, তত্ত্বীয়ভাবে সেটির কিছুই হওয়ার কথা নয়।

শুধু কাগজে-কলমে নয়, আমরা এর একটা 'উরাধুরা' বাস্তব পরীক্ষাও করেছি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আমরা ফোনটিকে একটি জেট-স্কির সাথে বেঁধে দিয়েছিলাম এবং বেশ কিছুক্ষণ উত্তাল সমুদ্রে তীব্র গতিতে জেট-স্কি চালিয়েছি। অবিশ্বাস্যভাবে, নোনা পানির ঝাপটা এবং তীব্র চাপ সহ্য করার পরেও ফোনটির কিছুই হয়নি! এটি প্রমাণ করে যে হঠাৎ ভারী বর্ষায় ভেজা, দুর্ঘটনাবশত বালতিতে পড়ে যাওয়া, বা কাদা-পানিতে মাখামাখি হওয়ার মতো ঘটনায় এই ফোনটি আপনাকে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত রাখবে। যারা একটু রাফ অ্যান্ড টাফ ব্যবহার করেন, যেমন ডেলিভারি রাইডার, ফিল্ড ওয়ার্কার বা ঘনঘন ভ্রমণে যান, তাদের জন্য এই ফিচারটি একটি লাইফ-সেভার হতে পারে।

তবে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এই রেটিং থাকা মানে এই নয় যে আপনি ফোনটি নিয়ে নিয়মিত সাঁতার কাটতে বা ডাইভিং করতে পারবেন। কারণ কোম্পানিগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রিত ল্যাব কন্ডিশনে পরীক্ষা করে এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বা সুইমিং পুলের ক্লোরিনযুক্ত পানি দীর্ঘমেয়াদে ফোনের সিল বা পোর্টের ক্ষতি করতে পারে। তবে দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য এই রেটিং যথেষ্টর চেয়েও অনেক বেশি।


রিয়েলমি সি ৭৫ ডিসপ্লে: রিফ্রেশ রেট, ব্রাইটনেস ও বাস্তব অভিজ্ঞতা

একটি ফোনের সাথে আমাদের সবচেয়ে বেশি ইন্টার‍্যাকশন হয় তার ডিসপ্লের মাধ্যমে। Realme C75-এ ব্যবহার করা হয়েছে একটি বিশাল 6.72 ইঞ্চির IPS LCD প্যানেল, যার রেজোলিউশন ফুল এইচডি প্লাস (FHD+)। চলুন এর ভালো-মন্দ দিকগুলো বিস্তারিতভাবে দেখি।

পজিটিভ দিক:

  • 90Hz রিফ্রেশ রেট: এই বাজেটে 90Hz রিফ্রেশ রেট থাকায় সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, ওয়েব ব্রাউজিং এবং সার্বিক UI নেভিগেশন খুবই স্মুথ এবং চোখের জন্য আরামদায়ক মনে হয়। 60Hz ডিসপ্লের সাথে তুলনা করলে এর পার্থক্যটা পরিষ্কার বোঝা যায়। আমরা ইউএফও টেস্ট করেও দেখেছি, এটি স্টেবলভাবে 90Hz পুশ করতে পারে, কোনো প্রকার ল্যাগ ছাড়াই।
  • কালার ও শার্পনেস: IPS প্যানেল হওয়া সত্ত্বেও এর কালার রিপ্রোডাকশন বেশ ভালো এবং ন্যাচারাল। রঙগুলো অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড বা ফ্যাকাশে মনে হয় না, বরং বেশ জীবন্ত। ফুল এইচডি প্লাস রেজোলিউশনের কারণে টেক্সট এবং ছবিগুলো খুবই শার্প দেখায়। YouTube বা Netflix-এ ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা বেশ 만족জনক। এটি Widevine L1 সার্টিফাইড, যার মানে আপনি Amazon Prime এবং Netflix-এ ফুল এইচডি কন্টেন্ট স্ট্রিম করতে পারবেন।

নেগেটিভ দিক:

  • AMOLED-এর অনুপস্থিতি: ২০-২৩ হাজার টাকা বাজেটে এখন অনেক ব্র্যান্ড AMOLED ডিসপ্লে অফার করছে। AMOLED ডিসপ্লের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর ইনফিনিট কনট্রাস্ট রেশিও এবং ট্রু ব্ল্যাক কালার, যা IPS প্যানেলে পাওয়া সম্ভব নয়। মুভি দেখার সময় বা ডার্ক মোডে ব্যবহার করার সময় AMOLED ডিসপ্লের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে ভালো। সেই তুলনায় C75-এর ডিসপ্লে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে।
  • ব্রাইটনেস: ইনডোরে বা ছায়ার মধ্যে ব্যবহারের জন্য এর 690 নিটস পিক ব্রাইটনেস যথেষ্ট। কিন্তু সরাসরি কড়া সূর্যের আলোতে বা আউটডোরে কন্টেন্ট দেখতে কিছুটা কষ্ট হতে পারে। ডিসপ্লেটি দেখা গেলেও, মনে হবে ব্রাইটনেস আর একটু বেশি হলে ভালো হতো, বিশেষ করে ছবি তোলার সময় ভিউফাইন্ডার দেখতে।
  • বেজেল: ফোনের তিনদিকের বেজেল বা বর্ডার বেশ সরু হলেও, নিচের দিকের বেজেল বা 'চিন' কিছুটা মোটা, যা আজকালকার ফোনে একটু বেমানান লাগে।

সর্বোপরি, যারা AMOLED ডিসপ্লের জন্য পাগল নন এবং একটি ভালো মানের, বড়, শার্প ও স্মুথ LCD ডিসপ্লেতে সন্তুষ্ট, তাদের জন্য এটি একটি ভালো প্যাকেজ। তবে এই ফোনের ২৩ হাজার টাকা দামের ভ্যারিয়েন্টের জন্য একটি AMOLED প্যানেল আশা করাটা অযৌক্তিক ছিল না।


রিয়েলমি সি ৭৫ ক্যামেরা পারফরম্যান্স: ছবির পেছনের আসল গল্প

এখন আসা যাক সেই অংশে, যা নিয়ে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর আগ্রহ এবং প্রশ্ন থাকে—ক্যামেরা। রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য নিয়ে কথা হবে, আর ক্যামেরা বাদ যাবে, তা তো হয় না। চলুন এর ক্যামেরার পারফরম্যান্সকে কাটাছেঁড়া করা যাক।

দিনের আলোতে ছবির মান

দিনের পর্যাপ্ত আলোতে এর ৫০ মেগাপিক্সেলের মেইন ক্যামেরা খুবই ভালো এবং নির্ভরযোগ্য পারফর্ম করে। রিয়েলমির সিগনেচার এআই কালার প্রোসেসিং এখানেও উপস্থিত, যা ছবিগুলোকে একটু বেশি ভাইব্রেন্ট, পাঞ্চি এবং সোশ্যাল মিডিয়া-রেডি করে তোলে। ছবিগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগে। ডিফল্টভাবে এটি পিক্সেল বিনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১২.৫ মেগাপিক্সেলের ছবি তোলে, যা ডিটেইলস এবং লাইট ব্যালেন্সের জন্য অপ্টিমাইজড। ছবির শার্পনেস এবং ডিটেইলস যথেষ্ট ভালো থাকে। তবে এর ডায়নামিক রেঞ্জ আরেকটু ভালো হতে পারত। অনেক সময় কড়া রোদে বা কনট্রাস্টি পরিবেশে, যেমন গাছের ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে, আকাশের সাদা অংশগুলো কিছুটা overexposed বা জ্বলে যায় এবং ছায়ার অংশগুলো অতিরিক্ত অন্ধকার হয়ে যায়। কিন্তু যেখানে লাইটিং কন্ডিশন পারফেক্ট এবং সমান, সেখানে এটি দিয়ে তোলা ছবি আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে।

কম আলো বা রাতের পারফরম্যান্স

বাজেট ফোনের আসল পরীক্ষা হয় কম আলো বা রাতে। এখানে Realme C75 মোটামুটি বা এভারেজ পারফর্ম করে। সাধারণ মোডে ছবি তুললে তাতে দৃশ্যমান নয়েজ বা গ্রেইন দেখা যায় এবং ডিটেইলস বেশ কমে আসে, ছবিগুলো সফট হয়ে যায়। তবে ডেডিকেটেড নাইট মোড অন করলে ছবির মানে নাটকীয় উন্নতি ঘটে। নাইট মোড কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে একাধিক এক্সপোজারকে একত্রিত করে, ফলে ছবির ব্রাইটনেস এবং ডিটেইলস উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ছবিগুলো তখন বেশ শার্প এবং ব্যবহারযোগ্য মনে হয়। কিন্তু নাইট মোডে ছবি তুলতে শাটার কিছুটা স্লো হয়ে যায়, তাই আপনাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনার হাত বা ফোনকে একদম স্থির রাখতে হবে, নতুবা ছবি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।

পোর্ট্রেট মোড ও সেলফি ক্যামেরা

পোর্ট্রেট মোডে এর এজ ডিটেকশন বেশিরভাগ সময় বেশ ভালো কাজ করে। এটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাবজেক্টকে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে সুন্দরভাবে আলাদা করতে পারে এবং একটি স্বাভাবিক দেখতে ব্লার ইফেক্ট তৈরি করে। তবে চুল বা চশমার মতো জটিল এজগুলোতে মাঝে মাঝে ভুল করে। একটি বিষয় যা মিস করেছি তা হলো, পোট্রেট মোডে 2x জুমের অপশনটি থাকলে আরও ভালো কম্পোজিশনের পোট্রেট তোলা যেত।

এর ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট বা সেলফি ক্যামেরার পারফরম্যান্স চলনসই। দিনের আলোতে ভালো সেলফি আসে। রিয়েলমির বিউটি অ্যালগরিদম স্কিনকে কিছুটা সফট এবং স্মুথ করে দেয়। স্কিন টোন কিছুটা ওয়ার্ম বা উষ্ণ টোনের দিকে থাকে, যা দেখতে ভালোই লাগে। তবে ইনডোরে বা কৃত্রিম আলোতে সেলফি কিছুটা সফট হয়ে যায় এবং ডিটেইলস কমে আসে।

ভিডিও রেকর্ডিং

ফোনটি দিয়ে রিয়ার এবং ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরা দিয়েই সর্বোচ্চ 1080p রেজোলিউশনে 30fps-এ ভিডিও রেকর্ড করা যায়। দিনের আলোতে ভিডিওর কোয়ালিটি এই বাজেটের হিসাবে চলনসই, কালারগুলো ভালো আসে। তবে এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো কোনো প্রকার স্ট্যাবিলাইজেশনের (OIS বা EIS) অনুপস্থিতি। এর ফলে হাঁটার সময় বা হাত সামান্য কাঁপলেই ভিডিওতে বেশ ঝাঁকুনি বোঝা যায়। যারা স্থিরভাবে ভিডিও করেন তাদের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু যারা ভ্লগিং বা চলন্ত অবস্থায় ভিডিও করার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এটি সেরা অপশন নয়।


পারফরম্যান্স ও UI: দৈনন্দিন ব্যবহারে কতটা শক্তিশালী?

Realme C75-এর হার্ডওয়্যার সেকশনে রয়েছে মিডিয়াটেকের অত্যন্ত জনপ্রিয়, পরীক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য চিপসেট MediaTek Helio G99। এটি একটি 6nm আর্কিটেকচারে তৈরি, যা পারফরম্যান্স এবং ব্যাটারি এফিসিয়েন্সির মধ্যে একটি চমৎকার ব্যালেন্স তৈরি করে। এর সাথে রয়েছে 8GB LPDDR4X RAM এবং দ্রুতগতির UFS 2.2 স্টোরেজ, যা অ্যাপ লোডিং এবং ফাইল ট্রান্সফারের সময়কে কমিয়ে আনে।

দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যেমন—ব্রাউজিং, ফেসবুকিং, ইউটিউব দেখা, হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং বা একাধিক অ্যাপ একসাথে ব্যবহার করার সময় ফোনটি কোনোভাবেই স্লো বা ল্যাগি মনে হয়নি। Realme UI 5.0, যা Android 14 এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, তার অপটিমাইজেশন বেশ ভালো। অ্যানিমেশনগুলো স্মুথ এবং রেসপন্সিভ। তবে হ্যাঁ, ফোনে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা ব্লোটওয়্যার প্রি-ইনস্টল করা থাকে, যা কিছুটা বিরক্তিকর। তবে সুখবর হলো, এগুলোর বেশিরভাগই আপনি সহজেই আনইনস্টল করে ফেলতে পারবেন এবং একটি ক্লিন এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।

গেমিং এক্সপেরিয়েন্স: গেমারদের জন্য কি ভালো?

আপনি যদি একজন ক্যাজুয়াল গেমার হন, তাহলে Helio G99 আপনাকে হতাশ করবে না। Free Fire, Subway Surfers, Clash of Clans-এর মতো গেমগুলো সর্বোচ্চ সেটিংসেও অনায়াসে এবং মসৃণভাবে খেলা যায়।

তবে Call of Duty: Mobile বা PUBG Mobile (BGMI) এর মতো হাই-গ্রাফিক্স গেম খেলতে হলে আপনাকে গ্রাফিক্স সেটিংস কিছুটা কমিয়ে খেলতে হবে। যেমন, PUBG Mobile 'Smooth' গ্রাফিক্সে 'Ultra' ফ্রেম রেট (40fps) পর্যন্ত সাপোর্ট করে, যা একটি ল্যাগ-ফ্রি অভিজ্ঞতা দেয়। দীর্ঘক্ষণ গেম খেললে ফোনটি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা গরম হয়, তবে অতিরিক্ত গরম হয়ে পারফরম্যান্স ড্রপ করার মতো সমস্যা আমরা দেখিনি।

যারা মূলত প্রতিযোগিতামূলক গেমিংয়ের জন্যই ফোন কিনছেন, তাদের জন্য এই বাজেটে আরও শক্তিশালী প্রসেসরের ফোন বাজারে থাকতে পারে। তবে যারা গেমিংয়ের চেয়ে দৈনন্দিন পারফরম্যান্স, ডিউরেবিলিটি এবং ব্যাটারি লাইফকে বেশি গুরুত্ব দেন, তাদের জন্য এটি যথেষ্টর চেয়েও বেশি শক্তিশালী।


ব্যাটারি ও চার্জিং: পাওয়ার হাউস পারফরম্যান্স

ব্যাটারি নিঃসন্দেহে এই ফোনের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় একটি দিক। ভেতরে থাকা 6000mAh-এর বিশাল ব্যাটারি আপনাকে সহজেই দেড় থেকে দুই দিনের ব্যাকআপ দিতে সক্ষম (মডারেট ব্যবহারে)। আমরা আমাদের টেস্টিং পিরিয়ডে, যা ছিল বেশ হেভি ব্যবহার (কয়েক ঘণ্টা গেমিং, ইউটিউব, ক্যামেরা ব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ), তারপরেও প্রায় ৮.৫ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন-অন-টাইম পেয়েছি, যা এক কথায় অসাধারণ। যারা দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন বা ফোনের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য সারাদিন চার্জ শেষ হওয়ার চিন্তা ছাড়াই ফোন ব্যবহার করার মতো মানসিক শান্তি আর কিছুতে নেই।

শুধু বিশাল ব্যাটারিই নয়, এটিকে দ্রুত চার্জ করার জন্য বক্সে একটি 45W SuperVOOC ফাস্ট চার্জারও দেওয়া হয়েছে। এই দ্রুতগতির চার্জার দিয়ে ফোনটি প্রায় ৩০ মিনিটে ০ থেকে ৫০% এবং এক ঘণ্টার সামান্য কিছু বেশি সময়ে (প্রায় ৭০-৭৫ মিনিট) ফুল চার্জ হয়ে যায়, যা ৬০০০ mAh ব্যাটারির জন্য খুবই ইমপ্রেসিভ।


সাউন্ড, কানেক্টিভিটি ও অন্যান্য ফিচার

এই ফোনে ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার রয়েছে, যা মিডিয়া কনজিউমের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। একটি স্পিকার নিচে এবং অন্যটি ইয়ারপিসের সাথে ইন্টিগ্রেটেড। সাউন্ড কোয়ালিটি বেশ লাউড এবং ক্লিয়ার, তবে সর্বোচ্চ ভলিউমে কিছুটা তীক্ষ্ণ লাগতে পারে। ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাকের উপস্থিতিও একটি বড় প্লাস পয়েন্ট। নেটওয়ার্ক রিসিপশন এবং কল কোয়ালিটি নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ ছিল না, উভয় সিমেই স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে।


প্রতিযোগীদের সাথে তুলনা: C75, C75x এবং অন্যান্য

একটি ফোনকে সঠিকভাবে বিচার করার জন্য বাজারের অন্যান্য প্রতিযোগীদের সাথে তুলনা করা অপরিহার্য। চলুন দেখি, Realme C75 তার নিজের সাশ্রয়ী সংস্করণ এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের বিপক্ষে কেমন পারফর্ম করে।

Realme C75 বনাম Realme C75x: ২০০০ টাকা বাঁচাতে কোনটি কিনবেন?

এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তুলনা। Realme C75x হলো মূল C75-এর একটি সাশ্রয়ী সংস্করণ।

  • দাম ও র‍্যাম: C75x-এর দাম ৳17,999 এবং এতে 6GB র‍্যাম রয়েছে। অন্যদিকে, C75-এর বেস মডেলের দাম ৳19,999 এবং এতে 8GB র‍্যাম রয়েছে।
  • সম্ভাব্য পার্থক্য: শুধু র‍্যাম নয়, ২০০০ টাকা দাম কমানোর জন্য C75x মডেলে সম্ভবত মূল C75-এর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফিচার, অর্থাৎ IP68/IP69 ওয়াটারপ্রুফ রেটিংটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চার্জিং স্পিডেও কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে।
  • সিদ্ধান্ত: আপনার বাজেট যদি খুব সীমাবদ্ধ থাকে এবং সর্বোচ্চ ডিউরেবিলিটি আপনার প্রধান চাহিদা না হয়, তাহলে C75x আপনার জন্য একটি ভালো ডিল হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি ২০০০ টাকা বাড়িয়ে সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ সুরক্ষা এবং কিছুটা ভালো মাল্টিটাস্কিং চান, তবে স্ট্যান্ডার্ড Realme C75 কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

Realme C75 বনাম Samsung Galaxy A15

  • ডিসপ্লে: এখানে Samsung পরিষ্কার বিজয়ী। Galaxy A15-এ রয়েছে একটি Super AMOLED ডিসপ্লে, যা C75-এর IPS LCD-এর চেয়ে অনেক বেশি ভাইব্রেন্ট এবং উন্নত ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স দেয়।
  • পারফরম্যান্স: দুটি ফোনেই Helio G99 প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, তাই দৈনন্দিন পারফরম্যান্সে খুব একটা পার্থক্য নেই।
  • ডিউরেবিলিটি ও ব্যাটারি: এখানে Realme C75 যোজন যোজন এগিয়ে। C75-এর IP69 রেটিং এবং 6000mAh ব্যাটারির তুলনায় A15-এর কোনো অফিসিয়াল রেটিং নেই এবং ব্যাটারি 5000mAh।
  • সিদ্ধান্ত: যারা ডিসপ্লে এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুকে গুরুত্ব দেন, তাদের জন্য A15 ভালো। কিন্তু যারা ব্যাটারি এবং টেকসই একটি ফোন চান, তাদের জন্য C75 সেরা।

Realme C75 বনাম Xiaomi Redmi Note 13 4G

  • ডিসপ্লে: Redmi Note 13-এ রয়েছে 120Hz রিফ্রেশ রেট সহ একটি চমৎকার AMOLED ডিসপ্লে, যা C75-এর 90Hz IPS প্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি স্মুথ এবং আকর্ষণীয়।
  • ক্যামেরা: Redmi Note 13-এর 108MP মেইন ক্যামেরা কাগজে-কলমে এগিয়ে থাকলেও, বাস্তব ব্যবহারে দুটি ফোনের ছবির মানে খুব বেশি পার্থক্য নেই, তবে শাওমির প্রসেসিং কিছুটা ন্যাচারাল।
  • ডিউরেবিলিটি ও ব্যাটারি: আবারও, Realme C75 এই সেগমেন্টে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। Redmi Note 13-এ মাত্র IP54 স্প্ল্যাশ রেজিস্ট্যান্স এবং 5000mAh ব্যাটারি রয়েছে।
  • সিদ্ধান্ত: যারা সেরা মাল্টিমিডিয়া এক্সপেরিয়েন্স (ডিসপ্লে ও স্পিকার) চান, তাদের জন্য Redmi Note 13 ভালো অপশন। কিন্তু যারা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং ওয়াটারপ্রুফ ফোন চান, তাদের C75-এর দিকেই যাওয়া উচিত।

ভালো এবং খারাপ দিক (Pros & Cons)

ভালো দিক (Pros) 👍

  • ✅ অবিশ্বাস্য IP69 ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স
  • ✅ বিশাল 6000mAh ব্যাটারি
  • ✅ দ্রুত 45W ফাস্ট চার্জিং (চার্জার বক্সে)
  • ✅ নির্ভরযোগ্য দৈনন্দিন পারফরম্যান্স (Helio G99)
  • ✅ আকর্ষণীয় ডিজাইন ও মজবুত বিল্ড

খারাপ দিক (Cons) 👎

  • ❌ AMOLED ডিসপ্লের অভাব
  • ❌ 120Hz রিফ্রেশ রেট নেই
  • ❌ গেমিং পারফরম্যান্স মধ্যম মানের
  • ❌ কম আলোতে ক্যামেরা আরও ভালো হতে পারত
  • ❌ ভিডিও রেকর্ডিংয়ে স্ট্যাবিলাইজেশন নেই

সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)

প্রশ্ন ১: Realme C75 এবং C75x এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?
উত্তর: প্রধান পার্থক্য হলো দাম এবং র‍্যাম। C75x-এর দাম ২০০০ টাকা কম এবং এতে 6GB র‍্যাম রয়েছে, যেখানে C75-এ 8GB র‍্যাম। এছাড়াও C75x-এ সম্ভবত IP68/69 ওয়াটারপ্রুফ রেটিংটি নেই।

প্রশ্ন ২: Realme C75 কি 5G সাপোর্ট করে?
উত্তর: না, C75 এবং C75x উভয়ই 4G স্মার্টফোন। Helio G99 একটি 4G চিপসেট।

প্রশ্ন ৩: এই ফোনটি কি গেমিংয়ের জন্য ভালো?
উত্তর: এটি ক্যাজুয়াল গেমিংয়ের জন্য ভালো, তবে হার্ডকোর বা প্রতিযোগিতামূলক গেমারদের জন্য এই বাজেটে আরও ভালো অপশন রয়েছে।

প্রশ্ন ৪: বক্সে কী কী পাওয়া যায়?
উত্তর: বক্সের ভেতর ফোন, একটি 45W চার্জার, একটি USB-C কেবিল, একটি সিম ইজেক্টর টুল এবং কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়। কোনো প্রোটেক্টিভ কেস বক্সে দেওয়া থাকে না।


রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য - অতিরিক্ত অংশ (গভীর বিশ্লেষণ)

চলুন, এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলা যাক। ধরুন, আপনি দোকানে গেছেন ফোন কিনতে। আপনার বাজেট ১৮-২০ হাজার টাকা। বিক্রেতা আপনাকে অনেকগুলো ফোন দেখালো। শাওমির কোনো ফোনে হয়তো আপনি পাবেন 120Hz AMOLED ডিসপ্লে, ইনফিনিক্সের কোনো ফোনে পাবেন আরও শক্তিশালী গেমিং প্রসেসর, আবার স্যামসাংয়ের কোনো ফোনে পাবেন ব্র্যান্ড ভ্যালু আর ক্লিন সফটওয়্যার। এই ভিড়ের মধ্যে Realme C75 এবং C75x কেন আলাদা?

এর উত্তর হলো, এই ফোন দুটি কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে সেরা হওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে না। বরং এরা একটি 'প্র্যাক্টিক্যাল অল-রাউন্ডার' প্যাকেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যেখানে ডিউরেবিলিটি বা টেকসই হওয়াকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে (বিশেষ করে স্ট্যান্ডার্ড C75 মডেলে)। ভেবে দেখুন, এই বাজেটে কয়টা ফোন আপনাকে পানিতে চুবানোর বা ধুলোবালিতে গড়াগড়ি দেওয়ার সাহস দেবে? উত্তর হলো—প্রায় কোনোটিই না। এখানেই C75 বাকিদের থেকে নিজেকে একটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে।

যারা একটু রাফ অ্যান্ড টাফ ব্যবহার করেন, যাদের ফোন প্রায়ই হাত থেকে পড়ে যায় বা বৃষ্টিতে ভেজার ভয় থাকে, তাদের জন্য এই ফোনটি একটি মানসিক শান্তি দেবে। এর ৬০০০ mAh ব্যাটারি নিশ্চিত করবে যে আপনাকে সারাদিন পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ঘুরতে হবে না। এই দুটি ফিচার একসাথে এই ফোনটিকে একটি 'নির্ভরযোগ্য ওয়ার্কহর্স' বা কর্মঠ সঙ্গী করে তুলেছে।

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আপনি যদি একজন গেমিং পাগল হন বা আপনার কাছে ডিসপ্লের পাঞ্চি কালারই সবকিছু হয়, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য নয়। ২৩ হাজার টাকা দিয়ে আপনি হয়তো একটি AMOLED ডিসপ্লে বা আরও শক্তিশালী গেমিং প্রসেসরের ফোন পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেই ফোনে কি আপনি IP69 রেটিং আর ৬০০০ mAh ব্যাটারির এই অপ্রতিরোধ্য কম্বো পাবেন? সম্ভবত না।

দিনশেষে, সিদ্ধান্তটা আপনার। আপনি কি কিছু স্পেসিফিকেশনের জন্য কম্প্রোমাইজ করে দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য একটি ফোন চান, নাকি সেরা ডিসপ্লে বা সেরা গেমিংয়ের জন্য ডিউরেবিলিটি এবং ব্যাটারি লাইফকে বিসর্জন দিতে রাজি আছেন? এই প্রশ্নের উত্তরই আপনাকে সঠিক ফোনটি বেছে নিতে সাহায্য করবে।


লেখকের শেষ মন্তব্য: কাদের জন্য এই ফোন?

আশা করছি, আমাদের এই দীর্ঘ এবং বিস্তারিত পোস্টটি পড়ে আপনি রিয়েলমি সি ৭৫ দাম কত ফিচার ও বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ এবং পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। আমরা সবসময় চেষ্টা করি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্য আপনাদের সামনে সহজভাবে তুলে ধরতে।

আমাদের মতে, Realme C75 সেইসব ব্যবহারকারীদের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ, যারা একটি নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফের স্মার্টফোন খুঁজছেন। এটি তাদের জন্য, যারা চকচকে স্পেসিফিকেশন শিটের চেয়ে প্র্যাক্টিক্যালিটিকে বেশি গুরুত্ব দেন। শিক্ষার্থী, ফিল্ডে কাজ করেন এমন পেশাজীবী, ডেলিভারি পার্সোনেল, ঘনঘন ভ্রমণকারী, বা যারা একবার ফোন কিনে লম্বা সময় নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য এই ফোনটি একটি আদর্শ প্যাকেজ হতে পারে।

আর বাজেট যদি আরেকটু কম থাকে, তবে কিছু কম্প্রোমাইজের (বিশেষ করে ওয়াটারপ্রুফিং) বিনিময়ে Realme C75x প্রায় একই অভিজ্ঞতা দিতে পারে।

তবে, আপনি যদি একজন হার্ডকোর গেমার হন, আপনার প্রধান প্রায়োরিটি যদি হয় ফটোগ্রাফি অথবা আপনি যদি AMOLED ডিসপ্লের কন্টেন্ট দেখতে অভ্যস্ত হন, তাহলে এই বাজেটে অন্য মডেলগুলোও একবার দেখে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা অভিজ্ঞতা থেকে কিছু যোগ করার থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

আর যদি আপনি মনে করেন, এই পোস্টটি আপনার পরিবার, বন্ধু বা পরিচিত কারো উপকারে আসতে পারে, তাহলে এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আসুন, সবাইকে রিয়েলমি সি ৭৫ এবং C75x সম্পর্কে সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানার সুযোগ করে দিই।

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। দেখা হবে পরবর্তী কোনো লেখায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url