বাজারে এলো realme C85 Pro: এই দামে এমন ফোন পাওয়া কি সম্ভব? চলুন জেনে নিই!

realme C85 Pro ফোনের বাংলা রিভিউ এবং 7000mAh ব্যাটারির ফিচার ইমেজ



কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন।

আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো? নতুন একটা স্মার্টফোন কেনার সময় আমাদের সবারই একটা কমন সমস্যা হয়, তাই না? বিশেষ করে বাজেট যদি মাঝামাঝি থাকে, তখন দ্বিধায় পড়তে হয়— কোনটা ছাড়ব আর কোনটা রাখব? ভালো ব্যাটারি নিলে হয়তো ক্যামেরাটা মনের মতো হয় না, আবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স চাইলে ডিসপ্লেটা সাধারণ মানের নিতে হয়। এই আপোষের দিন কি তবে শেষ হতে চলল?

আমার তো মনে হচ্ছে তাই! কারণ realme বাজারে তাদের নতুন ফোন realme C85 Pro নিয়ে এসেছে, আর বলা হচ্ছে— এই ফোনটি মিড-রেঞ্জের সব নিয়মকানুন বদলে দিতে এসেছে। এতে এমন কিছু ফিচার দেওয়া হয়েছে যা সাধারণত দ্বিগুণ দামি ফোনে দেখা যায়।

তো, চলুন আজ কোনো জটিল কথায় না গিয়ে, একদম খোলামেলা আড্ডা দেওয়া যাক এই ফোনটি নিয়ে। সত্যিই কি এটি "মিড-রেঞ্জের নতুন রাজা" হওয়ার যোগ্য? চলুন, এর প্রতিটি দিক ভালো-মন্দ মিলিয়ে দেখে নেওয়া যাক।

প্রথম দেখায় ভালোবাসা, আর ব্যবহারে ভরসা!

যেকোনো জিনিস কেনার আগে আমরা তার ডিজাইন আর দেখতে কেমন, সেটা খেয়াল করি। realme C85 Pro ফোনটি হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই আপনার একটা প্রিমিয়াম অনুভূতি হবে। খুব বেশি মোটাও না, আবার একেবারে হালকাও না; ওজন এবং পুরুত্বের মধ্যে দারুণ একটা ভারসাম্য রাখা হয়েছে।

তবে এর আসল চমক হলো এর মজবুত গঠন। realme একে শুধু সুন্দর করেই বানায়নি, রীতিমতো একটা ট্যাংকের মতো মজবুত করেছে!

  • IP69 Pro ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স: এর IP69 Pro ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স সাধারণ স্প্ল্যাশ-প্রুফিং থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। সোজা কথায় বলতে গেলে, প্রবল বৃষ্টিতেও ফোনটি ব্যবহার করা যাবে, এমনকি হাত ফসকে পানিতে পড়ে গেলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই মানের জলরোধী সুরক্ষা সাধারণত এই বাজেটে পাওয়া যায় না।
  • মিলিটারি-গ্রেড শক রেজিস্ট্যান্স: এর মানে হলো, দৈনন্দিন ছোটখাটো ধাক্কা বা হাত থেকে পড়ে গেলেও ফোনটি টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। যারা একটু বেখেয়ালি, তাদের জন্য এটা একটা বিশাল স্বস্তির বিষয়।

সুতরাং, দেখতেও সুন্দর আবার প্রচণ্ড টেকসই—ডিজাইনের দিক থেকে ফোনটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

চোখ জুড়ানো ডিসপ্লে: সিনেমা বা গেমের জন্য সেরা!

সারাদিন তো আমরা ফোনের স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে থাকি, তাই না? তাই ডিসপ্লেটা ভালো হওয়া খুব জরুরি। আর এই জায়গায় realme C85 Pro আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

এতে আছে ৬.৮ ইঞ্চির বিশাল এক AMOLED ডিসপ্লে। AMOLED হওয়ার কারণে এর রঙগুলো খুবই জীবন্ত এবং কালো রঙটা একদম মিশমিশে কালো দেখায়, যা ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

তবে আসল চমক অন্য জায়গায়!

  • 120Hz রিফ্রেশ রেট: এর কারণে ফেসবুক স্ক্রল করা থেকে শুরু করে গেমিং পর্যন্ত সবকিছু মাখনের মতো মসৃণ লাগে। একবার 120Hz ব্যবহার করলে আপনি আর সাধারণ স্ক্রিনে ফিরে যেতে চাইবেন না।
  • 4000 নিটস ব্রাইটনেস: এটা একটা অবিশ্বাস্য ফিচার! এর মানে হলো, ভরদুপুরে সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে দাঁড়িয়েও আপনি স্ক্রিনের সবকিছু একদম পরিষ্কার দেখতে পারবেন। স্ক্রিনে কী আছে তা দেখার জন্য আর হাত দিয়ে ছায়া বানাতে হবে না!

এক কথায়, কনটেন্ট দেখা, গেম খেলা বা সাধারণ ব্যবহারের জন্য এর ডিসপ্লে অসাধারণ।

ভেতরের শক্তি: কাজ ও গেমিংয়ে কেমন চলবে?

একটা ফোনের আসল পরিচয় তার পারফরম্যান্সে। realme C85 Pro-তে ব্যবহার করা হয়েছে নির্ভরযোগ্য Snapdragon 685 প্রসেসর। এই প্রসেসরটি দৈনন্দিন সব কাজ, যেমন— একাধিক অ্যাপ ব্যবহার, ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা ইত্যাদি খুব সহজেই সামলে নিতে পারে।

তবে আসল খেলাটা হলো এর RAM ম্যানেজমেন্টে। এতে ২৪ জিবি পর্যন্ত ডাইনামিক RAM ব্যবহারের সুযোগ আছে। এর মানে কী? সহজ ভাষায়, ফোনটি তার ইন্টারনাল স্টোরেজ থেকে কিছু জায়গা ধার করে RAM হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে আপনি একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ খুলে রাখলেও ফোন স্লো হবে না এবং অ্যাপগুলোর মধ্যে খুব দ্রুত আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

যারা ফোনে মাল্টিটাস্কিং করেন বা ভারী গেম খেলতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ফিচারটি দারুণ কাজের।

এক চার্জে ক'দিন? অবিশ্বাস্য 7000mAh ব্যাটারি!

এবার আসা যাক সেই ফিচারে, যা এই ফোনটিকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। সেটা হলো এর 7000mAh টাইটান ব্যাটারি। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন, ৭০০০mAh!

এর মানে হলো, একবার ফুল চার্জ দিলে সাধারণ ব্যবহারে ফোনটি অনায়াসে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত চলে যাবে। যারা সারাদিন ফোন ব্যবহার করেন, পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ঘোরেন বা বারবার চার্জ দেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি চান, তাদের জন্য এই ফোনটি আশীর্বাদের মতো। লম্বা ট্যুরে যাচ্ছেন? চার্জার নিতে ভুলে গেলেও আর চিন্তা নেই!

আর যখন চার্জ শেষ হবে, তখন 45W ফাস্ট চার্জার দিয়ে খুব দ্রুত একে আবার চার্জ করে নিতে পারবেন।

ছবি তোলার জন্য কেমন?

realme C85 Pro-তে রয়েছে 50MP AI ক্যামেরা। "AI ক্যামেরা" মানে হলো, ফোনটি নিজে থেকেই পরিবেশ বুঝে ছবির রঙ, আলো এবং ডিটেইলসকে আরও সুন্দর করে তোলে।

দিন বা রাত, যখনই ছবি তুলুন না কেন, আপনি বেশ ভালো এবং পরিষ্কার ছবি পাবেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্য এর ক্যামেরা যথেষ্ট ভালো। সামনে সেলফির জন্য একটি 8MP ক্যামেরাও রয়েছে, যা দিয়ে সুন্দর সেলফি এবং ভিডিও কল করা যায়।

এটি হয়তো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের জন্য সেরা ক্যামেরা ফোন নয়, তবে দৈনন্দিন জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখার জন্য এর ক্যামেরা আপনাকে হতাশ করবে না।

দাম কত এবং কোথায় পাবেন?

এত সব দারুণ ফিচারের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, "দাম কত?" এখানেই realme সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছে। ফোনটি তিনটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে:

  • ৬ জিবি RAM + ১২৮ জিবি স্টোরেজ: ৳২০,৯৯৯
  • ৮ জিবি RAM + ১২৮ জিবি স্টোরেজ: ৳২২,৯৯৯
  • ৮ জিবি RAM + ২৫৬ জিবি স্টোরেজ: ৳২৪,৯৯৯

এই দামে এমন ফিচারগুলোর সমন্বয় বাজারে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

শেষ কথা: ফোনটা কি আপনার জন্য?

তো, সব আলোচনার পর এখন প্রশ্ন হলো, এই ফোনটি কি আপনার কেনা উচিত? উত্তরটা নির্ভর করছে আপনার চাহিদার ওপর।

  • আপনি যদি এমন একজন হন, যার বিশাল ব্যাটারি দরকার এবং বারবার চার্জ দেওয়ার ঝামেলা পছন্দ করেন না, তাহলে চোখ বন্ধ করে এই ফোনটি নিতে পারেন।
  • আপনার যদি একটি অসাধারণ ডিসপ্লে দরকার হয় সিনেমা দেখা বা গেমিংয়ের জন্য, তাহলেও এই ফোনটি আপনার জন্য সেরা।
  • যারা একটু রাফ ব্যবহার করেন এবং একটি মজবুত ও টেকসই ফোন চান, তাদের জন্যও এটি একটি দারুণ পছন্দ।
  • আর বাজেটের মধ্যে থেকে যারা সেরা পারফরম্যান্স এবং সবকিছুর একটি দুর্দান্ত প্যাকেজ খুঁজছেন, তাদের হতাশ করবে না realme C85 Pro

আমার মতে, এই বাজেটে realme C85 Pro বর্তমানে বাজারের সেরা ফোনগুলোর একটি। এটি এমন একটি ফোন যা প্রায় সব দিকেই আপনাকে সন্তুষ্ট করবে এবং আপনার পয়সা উসুল করে দেবে।

এখন আপনারাই বলুন, এই ফোনটি নিয়ে আপনাদের কী মতামত? কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না যেন!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url