"মৃত্যুর আগে নিজেকে প্রস্তুত করো কোরআন ও হাদিসের আলোকে"২০২৫

মৃত্যু’র আগে নিজেকে প্রস্তুত করো 2025


ভূমিকা

সত্যি দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়া হইতে আমাদের প্রত্যেকের ধনসম্পদ স্ত্রী পুত্র পরিজন আত্মীয়-স্বজন সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে ।আজরাইল আসিয়া সকলের চোখের সামনে হইতে জীবন বাহির করিয়া লইয়া যাইবে। শত কান্নাকাটি করিয়াও কেহ তাকে ফিরাইয়া রাখিতে পারবেনা। বরং তারা অতি শীঘ্রই কবর খুঁড়িয়া তাতে রাখিয়া আসিবে। তারপর আসিবে কবরের মহা পরীক্ষা এ পরীক্ষা হইতে কেহই রেহায় পাইবেনা ।  সোনার দেহ খানা পচিয়া গলিয়া যাইবে। আহার হইবে মৃত্তিকা কীটের মিশিয়া যাইতে হইবে মাটির সাথে। কিয়ামতের কথা তো বাদই রহিল। সেদিনের হিসাব নিকাশের ন্যায় বিভীষিকা দেখিয়া ভয় না পাইবে এমন মানুষ নাই। দোযখের কথা এমন জ্বলন্ত আগুনে পুড়িতে থাকিতে হইবে যার নজির দুনিয়ায় নাই। তাই সময় থাকিতে সকলেরই এবাদত বন্দেগী করিয়া পরকাল মুক্তির পাথেয় সংগ্রহ করিয়া লওয়া একান্ত কর্তব্য।

মৃত্যু এমন একটি বাস্তবতা যা প্রত্যেক প্রাণের জন্য অবশ্যম্ভাবী এটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই কিন্তু বর্তমান দুনিয়া মুখী জীবনে আমরা অনেকেই এই অনিবার্য সত্যকে ভুলে যায় আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অসংখ্য বার মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন এবং আমাদের সতর্ক করেছেন যেন আমরা আখেরাতের জন্য প্রস্তুত হতে পারি ।

মৃত্যু — এমন এক সত্য, যা থেকে পৃথিবীর কোনো মানুষই মুক্ত নয়। ধনী হোক বা গরিব, রাজা হোক বা প্রজা — সবার জন্য একদিন অবধারিতভাবে এসে যাবে মৃত্যু। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজকের সমাজে আমরা মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কে এতটাই উদাসীন যে, যেন কখনো এ জীবন শেষ হবে না!

আসুন, কুরআন ও হাদীসের আলোকে জেনে নেই — মৃত্যুর পূর্বে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করব, যেন পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারি।

 কুরআনের আলোকে মৃত্যু সম্পর্কে সতর্কবার্তা

১. মৃত্যু অনিবার্য

“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।”
সূরা আল ইমরান: ১৮৫

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেউ চাইলেই মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারবেনা। 

২. নির্ধারিত সময়েই মৃত্যু আসবে

“কোনো ব্যক্তির মৃত্যু নির্ধারিত সময়ের এক মুহূর্ত আগে বা পরে হবে না।”
সূরা ইউনুস: ৪৯

আমরা যতই আধুনিক চিকিৎসা বা নিরাপত্তা ব্যবহার করিনা কেন মৃত্যু আমাদের ঠিক সেই সময়েই ধরা দিবে যে সময় আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।

 হাদীসের আলোকে মৃত্যুর প্রস্তুতির তাগিদ

১. স্মরণ করো মৃত্যু

“তোমরা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো, কারণ তা সকল আনন্দকে ধ্বংস করে দেয়।”
(তিরমিযী: ২৩০৭)

 নবী করীম সাঃ আমাদেরকে নিয়মিতভাবে মৃত্যুর কথা স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আমাদের অন্তর নরম হয় এবং আমরা গুনাহ থেকে দূরে থাকি।

২. বুদ্ধিমান কারা?

“সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যে নিজের মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়।”
(ইবনে মাজাহ: ৪২৬০)

অর্থাৎ বুদ্ধিমান ব্যক্তি তারাই যারা এই অস্থায়ী জীবনে চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি নেয়। 

 মৃত্যুর পূর্বপ্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ

১. খাঁটি তাওবা করা

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা করো।”
সূরা তাহরীম: ৮

 কীভাবে খাঁটি তাওবা করবেন:

  • গুনাহ স্বীকার করা
  • লজ্জিত হওয়া
  • অনুতপ্ত হওয়া
  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
  • ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় সংকল্প করা

২. সালাত আদায় করা

“নামাজ ধর্মের খুঁটি; যে তা প্রতিষ্ঠা করলো, সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো।”
(বায়হাকি)

যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে সে পরকালের সফলতার পথে অগ্রসর হয়।

৩. হালাল উপার্জন ও হারাম বর্জন

হারাম সম্পদ সুদ ঘুষ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন।

হারামের দ্বারা গঠিত শরীরে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার নেই।”
(তিরমিযী)

৪. সদকা ও দান

সদকা একটি চিরস্থায়ী সওয়াবের কাজ । মৃত্যু আসার পর একজন মানুষ যা চায় তা হল:

“হে আমার রব! তুমি যদি আমাকে অল্প সময়ের জন্য ফিরিয়ে দাও, তবে আমি সদকা করতাম ও নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।”— সূরা মুনাফিকুন: ১০

আজকে সুযোগ আছে কালকে নাও থাকতে পারে। 

৫. কুরআন শিক্ষার প্রতি যত্ন

আল্লাহর কিতাবের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ থাকা উচিত। মৃত্যুর পূর্বে কুরআন তেলাওয়াত বোঝার অভ্যাস করে তোলা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

“এই কুরআন এমন এক পথনির্দেশ যা মানুষকে সবচেয়ে সরল পথে পরিচালিত করে।”
সূরা ইসরা: ৯

আত্মজিজ্ঞাসার ৫টি প্রশ্ন

  1. আমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকভাবে পড়ি?
  2. আমি কি নিজের গুনাহর জন্য তাওবা করেছি?
  3. আমার উপার্জন কি সম্পূর্ণ হালাল?
  4. আমি কি দান-সদকায় অংশ নিচ্ছি?
  5. মৃত্যুর কথা মনে করে কি আমি আখিরাতের জন্য কিছু করছি?

যদি উত্তর “না” হয়, তাহলে আজই পরিবর্তনের দিন।

 মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের গাফেলতা



আজকাল আমরা মৃত্যুর কথা শুনেও ভাবি — "এখন না, পরে বদলাবো"। কিন্তু মৃত্যু তো কাউকে সময় দেয় না। এমন একটি সত্য যা আমরা সবাই জানি তবুও এ বিষয়ে আমরা চরম গাফেল আমাদের জীবনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা ও ভাবনায় মৃত্যুর হিসেব খুব কমই থাকে আমরা এমন ভাবে জীবন যাপন করি যেন অনন্তকাল বেঁচে থাকবো ।বর্তমান যুগে মানুষের দুর্বলতা হলো দুনিয়ার আসক্তি টাকা-পয়সা বাড়ি গাড়ি নাম যশ এসবের পেছনে  ছুটতে ছুটতে মানুষ ভুলে যায় যে একদিন এসব ফেলে একাকী কবরে যেতে হবে। মানুষ ভাবে সে অনেক দিন বাঁচবে অনেক কিছু করবে অথচ মৃত্যু কখন আসবে তা কেউ জানে না।

“তিনটি জিনিস মানুষের পেছনে চলে — পরিবার, সম্পদ ও আমল। পরিবার ও সম্পদ ফিরে যায়, কিন্তু আমলই সঙ্গে থাকে।”
(বুখারী ও মুসলিম)

 উপসংহার

জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর মৃত্যু চিরস্থায়ী জীবনের দরজা। তাই এখনই সময় নিজের আমল, ইমান, এবং চরিত্র পরিশুদ্ধ করার। কুরআন ও হাদীস আমাদের দেখিয়েছে সুস্পষ্ট পথ — তাওবা, ইবাদত, সদকা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পারি।

আসুন, নিজেকে প্রশ্ন করি — “আমি কি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত?”
যদি না হই, তবে আজ থেকেই শুরু করি সেই প্রস্তুতি। কেননা কাল হয়তো আর সময় থাকবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url