"পরকালীন মুক্তির উপদেশ ও দুনিয়ার মোহ থেকে বাঁচার পথ- কুরআন ও হাদিসের আলোকে"

পরকালীন মুক্তির উপদেশ: দুনিয়ার মোহ ও সন্তান-সম্পদের ফিতনা থেকে বাঁচার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

পরকাল মুসলমানের আসল গন্তব্য। এই দুনিয়ায় আমরা যা কিছু উপার্জন করি বা যাদের ভালোবাসি, তার সবই এক সময় ফেলে রেখে চলে যেতে হবে। অথচ আমরা সম্পদ ও সন্তানের পেছনে ছুটতে ছুটতে আখিরাত-এর কথা ভুলে যায়। সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার সৌন্দর্য এই সৌন্দর্যে বিভোর হইয়া মানুষ পরকালকে ভুলে যাই। যে সম্পদ উপার্জনে আল্লাহর এবাদত ও জিকির হইতে তার স্মরণ ভুলাইয়া দেয় সে সম্পদ পরকালে তার জন্য বিরাট বোঝা হইয়া দাঁড়াইবে।

অপরদিকে সন্তান দুনিয়ার ফেতনা অর্থাৎ পরীক্ষার কারণ সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করিয়া যদি অন্যায় ভাবে তাদের জন্য সম্পদ উপার্জন করিয়া থাকে তবে সে পাপ সন্তানের হইবে না হইবে উপার্জন কারির। অথচ দেখা যায় সম্পদ ও সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন অন্যায় ভাবে রচনা করিয়া গেলেও মৃত্যুর সময় তারা কোন উপকার করতে পারে না বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কবরে রাখিয়া আসিয়া সম্পদ বন্টনে ব্যস্ত হইয়া পড়ে । মৃতের জন্য কিছু করার আছে তাও তারা ভুলে যায় । তাই সম্পদ ও সন্তানের ভবিষ্যৎ রচনার আগে নিজের ভবিষ্যৎ রচনা ও নিজে রক্ষা পাইবার জন্য এবাদত বন্দেগি করিয়া পরকালের পথের সম্বল সংগ্রহ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

দুনিয়ার সম্পদের মোহ: হালাল ও হারামের সীমা

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে আমাদের জন্য পরীক্ষার স্থান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সম্পদ উপার্জন করা অপরাধ নয়, কিন্তু যদি তা হালাল-হারামের সীমা অতিক্রম করে, তখন তা আমাদের পরকালের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

 আধুনিক সময়ের মানুষের প্রধান চিন্তা হয় অর্থ উপার্জন এটা একদম স্বাভাবিক বিষয় কারণ পরিবার সমাজ দায়িত্ব সবকিছু চালাতে টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় তখন যখন টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ ভুলে যায় এই অর্থ হালাল না হারাম। আল্লাহ সন্তুষ্ট হচ্ছেন কিনা অনেকেই নামাজ রোজা জিকির কোরআন তেলাওয়াত বাদ দিয়ে শুধু ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকেন। 

এমনকি কেউ কেউ সুদ ঘুষ প্রতারণার মত হারাম পথে অর্থ উপার্জনে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই ধনসম্পদ আমাদের পরকালে কোন উপকারে আসবে তো। সেই দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বন্ধু বান্ধব কোন কাজে আসবে না কাজ দিবে শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কাছে পরিষ্কার হৃদয় নিয়ে এসেছে । এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন যদি অন্তর খাঁটি না হয় ঈমান না থাকে তাকওয়া না থাকে তাহলে সম্পদ দিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

সন্তান: আশীর্বাদ নাকি পরীক্ষার উপকরণ?

সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত, আবার অনেক সময় তারা আমাদের পরীক্ষার মাধ্যমও হতে পারে। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে গিয়ে যদি হারাম পথে উপার্জন করি, তাহলে তার দায় আমাদেরই বহন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের পরীক্ষা মাত্র, (সূরা তাগাবুন আয়াত:১৫)

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সন্তান ও ধনসম্পদ এই দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা

পরকাল: আসল জীবনের দিকে প্রত্যাবর্তন

এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু পরকাল চিরস্থায়ী। আমাদের সব কাজের হিসাব নেয়া হবে সেদিন। আল্লাহ বলেন, "প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এবং কিয়ামতের দিনই তোমাদের পুরোমাত্রায় প্রতিদান দেওয়া হবে।" (সূরা আল-ইমরান: ১৮৫) 

আমরা দুনিয়াতে চিরকাল থাকবো না এটিই চরম বাস্তবতা। মৃত্যু আমাদের খুব নিকটে প্রতিদিন আমরা বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশী কাউকে না কাউকে হারাচ্ছি এই মৃত্যুর পরে শুরু হয় আসল জীবন। সেখানে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব কাজের হিসাব নেবেন। 

আমরা কোথা থেকে উপার্জন করেছি। কোথায় ব্যয় করেছি  সন্তানদের কি শিক্ষা দিয়েছে আমাদের অন্তরে তাকওয়া ছিল কিনা। তাই আমাদের উচিত এখনই পরকালীন পাথেয় সংগ্রহ শুরু করা ইবাদত দান সদকা হালাল উপার্জন খালেছ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে যাওয়া।

কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবো এই দুনিয়ার ফিতনা থেকে?

নামায কায়েম করা

নামাজ বা সালাত ইসলাম ধর্মের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ এটি ঈমান ও ইসলামের মধ্যে এক স্থায়ী সেতুবন্ধন। নামাজ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয় বরং এটি এক মহান আত্মিক সংযোগ বান্দা ও রবের মাঝে সরাসরি কথা বলার মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে নামাজের যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে এত ব্যাপকভাবে দেখা যায় না। আল্লাহ তাআলা বহুবার কুরআনে নামাজের আদেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়লা বলেন তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। ‌‌(সূরা আল বাকারা আয়াত ৪৩)

নিয়মিত নামাজ পড়া নামাজ মানুষকে সকল প্রকার অশ্লীল ও বেহায়াপনা গুনাহ হতে রক্ষা করে। এটি পরকালের সবচেয়ে বড় সফলতার চাবিকাঠি। নামায আমাদেরকে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে রাখে। প্রতিদিনের সালাত আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ রাখে।

হালাল উপার্জন

আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে হালাল রিজিকের পথে চলাই হলো প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন হে মানবজাতি পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না (সূরা আল বাকারা ১৬৮) 

এখানে হালাল খাদ্য গ্রহণের আদেশ দেওয়া হয়েছে যার উৎস অবশ্যই হালাল উপার্জন হতে হবে। আরেক জায়গায় আল্লাহতালা বলেন তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করো না (সূরা আন নিসা২৯)

এ আয়াত হারাম ও জুলুমের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সন্তানকে দ্বীন শেখানো


সন্তান আল্লাহর দেওয়া এক মহামূল্যবান নিয়ামত কিন্তু  এই নিয়ামতের সঠিক যত্ন না নেওয়া হলে তা আজাবে পরিণত হতে পারে একজন মুসলিম পিতা-মাতার দায়িত্ব হল সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা আল্লাহ তাআলা বলেন হে ঈমানদারগণ তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো (সূরা তাহরীম আয়াত ৬) 

পরিবারকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হল তাদেরকে দিনের শিক্ষা দেওয়া এবং নেক আমলের পরিবেশ তৈরি করা। হযরত লোকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে উপদেশ দেন হে আমার সন্তান তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো না নিঃসন্দেহে শিরক হলো এক মহা জুলুম (সূরা লোকমান আয়াত 13)  

এখানে পিতা নিজের সন্তানকে প্রথম যে উপদেশ দিচ্ছেন তা হল তাওহীদের শিক্ষা এটি আমাদের শেখায় সন্তানের প্রথম শিক্ষা দ্বীন হতে হবে।শিশুকাল থেকেই সন্তানদের ইসলামিক শিক্ষায় গড়ে তুললে ভবিষ্যতে তারা দুনিয়ার মোহে হারিয়ে যাবে না।

নিয়মিত তওবা করা

আমরা মানুষ, ভুল হতেই পারে। তবে আল্লাহ তো তওবা কবুলকারী। তাই নিয়মিত তওবা আমাদের পরকালের পাথেয় হয়ে দাঁড়ায়। বিগত জীবনের যাবতীয় ধরনের পাপ হইতে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হইয়া আর কখনো করিব না এ ধরনের দৃঢ় সংকল্প করিয়া আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কে বলে বিশুদ্ধ অন্তরের তওবা। তওবা ব্যতীত মানুষ পাপ মুক্ত হতে পারেনা।

উপসংহার

পরকাল কোন কল্পনা নয় বরং প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারিত এক বাস্তব জীবন দুনিয়ার মোহে সম্পদ ও সন্তানদের চিন্তায় বিভোর হয়ে আমরা যেন এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে ভুলে না যায়। সন্তান ও সন্ততিদের ভবিষ্যৎ গড়ার আগে নিজের পরকালীন ভবিষ্যৎ গড়া জরুরী। আসুন আমরা নিজেদের সংশোধন করি ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হই এবং পরকালকে সামনে রেখে জীবন পরিচালনা করি ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন এবং আখিরাতে মুক্তির পথ সহজ করে দিন আমিন।


 👉👉👰👉আপনার মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।

👉আরও পড়ুন: কোরবানি ঈদের ফজিলত ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি ২০২৫ কোরবানি ঈদ কত তারিখে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url